বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৮ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
মৃত্যু: মানব সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে লিপিবদ্ধ

মৃত্যু: মানব সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে লিপিবদ্ধ

ড. সৈয়দ মাওলানা রেজওয়ান আহমদ:

মৃত্যু মানুষের জন্য অবধারিত। শুধু মানুষ কেন, যার ভেতরেই প্রাণ আছে সেই একদিন মৃত্যুর মুখে পতিত হবে। যা চির সত্য ও সর্বজন স্বীকৃত। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই একটি জায়গায় একমত পোষণ করেছেন, আর তা হলো “নিশ্চিত মৃত্যু’।
মহান রাব্বুল আলামীন এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে’ (আল কুরআন, ৩ : ১৮৫)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,-‘জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি। আর আমারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’(আল কুরআন,২১ : ৩৫)

মহান রাব্বুল আলামীন, মানুষ সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে মানুষের তাকদীর বা ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেছেন। নির্ধারণ করেছেন কে কত সময় বাঁচবে, কোথায় কার মৃত্যু হবে, তা তিনি প্রকাশ করেননি। মানুষ কে কতদিন বাঁচবে, কার হায়াত কতটুকু তা জানাননি তিনি।
তবে এই গোপনীয়তার রহস্য তো একদম স্পষ্ট। মানুষের হায়াতকে গোপন রেখে তিনি পরীক্ষা করতে চান তাঁকে কে কতটা ভালো কাজ করে সেটাই তিনি দেখতে চান। তাই তিনি বলেন-‘আর প্রত্যেক জাতির জন্য এক নির্দিষ্ট সময় আছে। অতঃপর যখন তাদের সময় আসবে তখন তারা মুহুর্তকাল দেরী করতে পারবে না এবং এগিয়েও আনতে পারবে না।’ (আল কুরআন,৭ : ৩৪) অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছেন। সময় হলেই তাকে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেও কেউ মারা যাবে না, আবার সময় হওয়ার পরও কাউকে অবকাশ দেয়া হবে না।
এ প্রসঙ্গে অাল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ তায়ালা কাউকে অবকাশ দেবেন না’। (আল কুরআন, ৬৩ : ১১)
মৃত্যুকে স্মরণ করতে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা পার্থিব সুখ-সম্পদ ও স্বাদ ধ্বংসকারী মৃত্যুকে খুব বেশি করে স্মরণ করো’। (তিরমিজি)
নবীজী আরো ইরশাদ করেন, ‘ওই ব্যক্তি সবচেয়ে বুদ্ধিমান, যে মৃত্যুকে সর্বাধিক স্মরণ করে এবং সেজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করে’। (ইবনে মাজাহ)
কবির ভাষায়, ‘জন্মিলে মরিতে হবে, চিরদিন কে কোথায় রবে?’ মানুষ মরিবে সবে, নহে সে অমর ভবে’।

আমাদের কখন কিভাবে কোথায় কার মৃত্যু হবে তা কেউই জানিনা। আমাদের সমাজে অনেক বাবাকে দেখছি যারা সন্তানকে কবরে রেখেছেন নিজহাতে। বাবর হাতে সন্তানের জন্য কবর খুঁড়েছেন। কিন্তু কেউ কি জানত যে, বাবার আগেই ছেলে বিদায় নিবে? বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ বহন করতে হবে?
বলা যায়, পৃথিবীর এই মায়াজালে আটকে আমরা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে গেছি পুরোপুরি। আমরা মনে করি, এখন যৌবন কাল, যেভাবে পারি এটাকে উপভোগ করি, পরে ভালো হয়ে যাব। মনে করি, অন্যায় অপরাধ তো আর বৃদ্ধকালে করতে পারব না, তাই যা করার এখনই করে নিই, পরে তওবা করে ফিরে আসব! এমন অলীক কল্পনা তো অনেকেই করে। তবে আমরা নিশ্চিতভাবে কি বলতে পারি যে, আমি বৃদ্ধ হওয়া পর্যন্ত বাঁচব! না জানিনা। আমাদের জীবনকে সুধরে নেয়ার আগে মৃত্যু আমাদের কাছে আসবে না! এমনি ভেবে লাভ হবেনা। আমাদের চোখের সামনে চিরবিদায় নিয়ে কত যুবক কবরে চলে গেল, অনেক আকষ্মিকভাবে, অনেক সড়ক দুর্ঘটনায়, অনেক লঞ্চডুবে, অনেক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অনেক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করছেন। আবার অনেক মরদেহ নিষিদ্ধ পল্লী থেকেও উদ্ধার করেছে পুলিশ। অনেক ত্যাগী ব্যক্তিরা অন্যের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। অনেক ভাগ্যবানরা পবিত্র কুরআন পড়তে পড়তে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। অনেককে নামাযরত অবস্থায় এক পাশে সালাম ফেরানোর পর অপর পাশে সালাম ফেরানোর সুযোগ না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। এমনিভাবে গত ৪ সেপ্টেম্বর- ২০২০ শুক্রবার ঢাকার কাছের শিল্প শহর নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত মসজিদে এশার নামাজের পর পরই দুটি এসি বিস্ফোরিত হলে মসজিদে আগুন ধরে যায়। দূর্ঘটনায় এ পর্যন্ত প্রায় ২১জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারা কী জানতো! এমন দূর্ঘটনায় কবলিত হবে?
সুতরাং সৃষ্টির সৃষ্ট জীব সকল মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ দুনিয়ার আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে মানুষ বের হতে পারে। পালাতে পারে আদালত থেকেও। ভয়ঙ্কর অপরাধীও বেঁচে থাকতে পারে অন্যদেশে আত্মগোপন করে। কিন্তু মৃত্যু থেকে কেউ কি রেহায় পেতে পারে? মৃত্যুর হাত থেকে পালিয়ে যাওয়া কখনো কি সম্ভব? কিছুতেই নয়। সুউচ্চ দুর্গ, কোন নিরাপদ আশ্রয় অথবা অন্য কোথায়ও পালিয়ে মৃত্যু থেকে মানুষ রক্ষা পাবে না। সে যেখানেই যাক না কেন, সময় হলে মৃত্যু সেখানে পৌঁছে যাবে। এ বিষয়ে ইরশাদ হচ্ছে- ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও’। (আল কুরআন, ৪ : ৭৮)

তাই আসুন! মৃত্যুর পূর্বে পরকাল জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি। জীবিতাবস্থায় সদাসর্বদা সত্য ও সুন্দরের পক্ষে, ন্যায় ও কল্যাণের ওপর অবিচল থাকি।অন্ততপক্ষে নিজেকে পাপ ও অন্যায় থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি।
আল্লাহ আমাদের সকলকে মৃত্যু আসার পূর্বে পরকারের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার তাওফিক দিন। আমিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com